অব্যক্ত (তৃতীয় পর্ব)

এই গল্পের পূর্ববর্তী পর্ব

আমি বুঝতে পারছিলাম যে আমি তুষার কে ভালোবাসতে শুরু করেছি। মানুষ নিজেকেই চিনতে কত সময় নেয়! নিজের রূপ প্রতিনিয়ত নিজেরাই আবিষ্কার করি আমরা। কিছুদিন আগে অবধি ভাবতাম এক জনমে একজনকেই ভালোবাসা যায়, কিন্তু এখন বুঝতে পারি ভালোবাসার ব্যাপ্তি এমন আর সেটা যখন মনকে ছুঁয়ে যায় তখন তাকে এড়িয়ে যাওয়া যায়না। আর তখন বোধহয় ভালো খারাপের গণ্ডিতে নিজেকে মাপা যায়না। সত্যিকারের ভালোবাসা কারুর জীবনে কোন ক্ষতি করতে পারেনা। আমাদের দুজনের সময় কখন যে কিভাবে কেটে যেত নিজেরাই জানতাম না।

ছুটির দিন গুলোতেও ওর বাড়ি চলে যেতাম, সারাদিন ওর সাথে কেটে যেত, ও আমায় ইংলিশে কথা বলতে বলত যাতে আমি তাড়াতাড়ি শিখতে পারি। আমি ওর জন্য নানারকম রান্না করতাম যতক্ষণ রান্না করতাম ও আমার কাছেই থাকত, দুজনের কথা শেষ হত না যেন।
এমনই একদিন, খাওয়া দাওয়া শেষ করে ওর সাথে ওর ঘরে গেলাম, ও শুয়ে পড়ে আমায় হাতের ইশারায় ডাকল; কাছে গিয়ে বসলাম, হাতটা পাশে ছড়িয়ে ওর হাতে মাথা রেখে শুতে বলল, সবই ঘার নেড়ে আর চোখের ইশারায় । আমি মাথা নেড়ে না করলাম, ও বলল,
“আমি ঘুমাবো আর তুমি কি জেগে বসে আমায় পাহারা দেবে?”

আমার লজ্জা করছিল, মাথা নিচু করে বসে রইলাম। ও আমার কোলের উপর রাখা হাতটা হাল্কা করে ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতন ওর বুকের কাছে চলে গেলাম, ও আমার মাথায় হাত বোলাতে লাগল। তারপর গালে ,কপালে, ঠোঁটে, গলায় আঙুল দিয়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগল, আবেশে চোখ বুজে এলো আমার। আমার থুতনি টা আলতো করে ধরে ওর ঠোঁটটা আমার ঠোঁটের কাছে নিয়ে এলো, আমি ওর নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারছিলাম, দুজনের ঠোঁট মিলে গেল কিছুক্ষনণই, চরম পিপাসার নিবারণ হল।

বহু কাঙ্খিত ভালোবাসার একধাপ অগ্রসর হলাম আমরা। কতক্ষণ সময় অতিবাহিত হল নিজেরাই জানতাম না। ওর বাহুডোরে ধরা পড়লাম, আমার সারা শরীরে ওর স্পর্শ অনুভব করছিলাম। ও আস্তে আস্তে আমায় শাড়ির বন্ধন মুক্ত করল, শরীরের খোলা অংশে গুলো ওর ঠোঁটের উষ্ণতায় ভরে যাচ্ছিল, গলায়, পিঠে, কোমরে, পেটে ওর চুম্বনে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম।

ও যখন হাত বাড়িয়ে আমার ব্লাউজ খুলে দিচ্ছিল আমার ওকে বাঁধা দেওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিল না। আমি ওকে পুরোপুরি পেতে চাইছিলাম। আমার স্তন যখন ওর হাতের ভিতর, আর ও আস্তে আস্তে চাপ দিয়ে তার পেলবতার প্রশংসা করছে আমি তখন ভালোলাগায় ভেসে যাচ্ছি, ওর ঠোঁটের স্পর্শ আমায় শিহরিত করছিল মূহূর্মুহু। আমার কোমরে, নাভিতে জিভ দিয়ে লেহন করছিল, আমি কাঁপছিলাম থরথর করে।

ভালোলাগা আর উত্তেজনার চরম মূহুর্তে আমায় মনে হল, আমি কি অসিতের সাথে কোন অন্যায় করছি! কথাটা মাথায় আসার সাথে সাথে আমি তুষার কে থামতে বললাম। ও আর এগোলো না। ভালোবাসার প্রগাড়তা বুঝলাম যখন চরম আদর শুরুর আগের মুহূর্তে না করা স্বত্বেও ওর কোন রাগ বা অভিমান দেখলাম না। সেদিন সময়ের খেয়াল ছিল না, দেখলাম বেশ রাত হয়ে গেছে। তুষার আমায় বাড়ি অবধি ছাড়তে এলো। পথে সুবীরের সাথে দেখা, ও আমাদের দেখে কেমন একটা ব্যঙ্গার্থক মুখভঙ্গি করে চলে গেল কোন কথা বলল না। দুজনের বেশ অস্বস্তি হোল, ও বলল,
“এত রাত করা উচিত হয়নি, তুমি একা থাকো আমার চিন্তা হয়”।
আমি কিছু বললাম না।

অসিতের কথা ভাবছিলাম। বড্ড দোটানায় পড়ে গেছিলাম। সমাজ, শিক্ষা আমাদের খোলা মনে ভাবতে দেয়না। কোনটা ঠিক! কোনটা ভুল! সব ভাবনা যেন এলোমেলো হয়ে যায়। মন খারাপ করে এলো কিছু যেন বুঝতে পারছিলাম না, চোখ ভরে এলো জলে। ঠিক সেই সময় অসিতের ফোন এলো। কান্না ভেজা গলা শুনে ও উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। কারণ জানতে চাইলে ওকে সব বললাম। সব শুনে ও কিছুক্ষণ চুপ করে রইল তারপর বলল,
“ভালোবাসা অনেক বড় জিনিস যা আমাদের মতন সাধারণ মানুষরা বুঝতে পারেনা, সত্যি ভালোবাসা পাওয়া অনেক ভাগ্যের ব্যাপার। জীবনে অনেকবার ভালোবাসা আসতে পারে। কিন্তু সমাজ আমাদের জীবনে এমন কিছু গণ্ডী করে রেখেছে যা আমরা উলঙ্ঘন করতে ভয় পাই। তবে ভালোবাসা সেসব মানে না, সে তার নিজস্ব গতিতে চলে। আমি তোমায় ভালোবাসি, আর তুমি আমায় ভালোবাসো বিশ্বাস করি। আমাদের জীবন আর পাঁচজন সাধারণের মতন হোক আমি চাই না। তুমি কষ্ট পেও না। ভালোবাসার স্রোতে বয়ে যাও। আমিও থাকবো তোমার সাথে”।

আমিও এই সমাজেরই মানুষ! অসিত যত সহজে কথাগুলো বলল তত সহজে মন মানল না। কিন্তু ঘুম এলো পরম শান্তিতে।
পরদিন সুবীর আমার সাথে অনেকদিন পর কথা বলল, তারপর ফেরার সময় বাড়ি অবধি এগিয়ে দিতে এলো। রাস্তায় আমায় বলল,
“আমার কিন্তু তোমার কাছে পাওনা আছে”।
ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে ওকে জিজ্ঞাসা করায় বলল,
“এমন না বোঝার ভান করছো কেন? তুষার বোসকে পাইয়ে দিলাম, তোমার একাকীত্বে নতুন রঙ এনে দিলাম আর তুমি সেটার জন্য আমার কৃতজ্ঞ থাকবে না?”

কথাটা শুনে খুব খারাপ লাগল। ও আমায় চরম অপমানজনক ইঙ্গিতে কথা বলছিল। তাও ওকে বললাম,
“তুই আমার ভায়ের মতন তুই এভাবে কথা বলছিস কেন? দিদি হিসাবে আমি তো তোকে কিছু দিতেই পারি”।
কথাটা শুনে অদ্ভুত মুখভঙ্গি করে বলল,
“তোমার মতন সেক্সি মহিলাকে দিদি ভাবব কোন দু্ঃখে? আর নিজেকে তোমার ভাই না ভেবে প্রেমিক ভাবলে বেশী খুশি হব”।

কথাটায় এমন নোংরা ইঙ্গিত ছিল, আমার গা ঘিনঘিন করে উঠল।
আমি খুব মাথা ঠাণ্ডা রেখে কিন্তু কঠিন স্বরে বললাম,
“তুই ভাবলেও আমি ভাবব এমন তো নয়”!
ওকে আর কথা না বলার সুযোগ দিয়ে আমি বাড়ির পথে পা বাড়ালাম।
ও আর পিছু নিলো না।

সুবীরের কুৎসিত ইঙ্গিত ওর কথাবার্তা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল সাথে সাথে মনে একটা ভয়ের সঞ্চার হল। ঘরে এসেই অসিতকে ফোন করলাম, ও ফোন ধরল না, কাজে ব্যস্ত ভেবে তুষার কে ফোন করে সব জানালাম, ও বলল,
“তুমি ভয় পেয়োনা, আমি পাশে আছি, আর এই মানসিকতার লোকেদের ভয় পেলে এরা পেয়ে বসবে, রুখে দাঁড়াও। তোমার জীবনে তুমি কি করছো সব সিদ্ধান্ত তুমি নেবে”।
পরে অসিতের সাথে কথা বললাম ও একই কথা বলল। আরো বলল আমি যেন তুষারকে সব জানিয়ে রাখি। ভয় কেটে গিয়ে মনোবল বেড়ে গেল।
পরদিন পড়তে গিয়ে জানলাম তুষার এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যাচ্ছে। সবাই কে আসতে বারণ করল। কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল।
সেদিন রাত বারোটায় হঠাৎ ফোন বেজে উঠল! অত রাতে ফোন বাজতেই ভয় পেলাম, তুলে ‘হ্যালো’ বলতেই দেখি তুষারের গলা, “দরজা টা খোলো”।

আমি ভয় পেয়ে খানিকটা বোবা হয়ে গেলাম, তুষার আবার বলল,
“শ্রবণা আমি তোমার বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছি, দরজাটা তাড়াতাড়ি খোলো”।
আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। ও ভিতরে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। আমায় হতবাকের মতন তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
“অবাক হয়েছো না? সকালেও হয়েছিলে, তাও তোমায় কিছু বলিনি। তোমায় অবাক করতে আর তোমার কথা ভেবেই আমার এই সিদ্ধান্ত”।

আমার অবাক হওয়া কাটছে না দেখে বলল, “সুবীরের ব্যবহার আর পরিস্থিতির সঠিক অনুমান করার জন্য ঠিক করলাম কদিন বাইরে যাওয়ার নাম করে তোমার কাছে থাকবো। তাতে শুধু তোমায় পাহারা দেওয়া না, সারাক্ষণ তোমাকে কাছে পাওয়াও হবে”।
বলে হেসে উঠল। আর দুহাত প্রসারিত করে আমায় বুকে টেনে নিলো।

বুকে টেনে নেবার পর কি হল পরবর্তী পর্বে

গল্পটি কেমন লাগলো এবং পরবর্তীতে কোন ক্যাটাগরির গল্প চান? কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ!

Related Posts

1 thought on “অব্যক্ত (তৃতীয় পর্ব)”

Leave a Comment

error: Content is protected !!