ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পঞ্চাদার দোকানে আসতে দেখল আড্ডা জমে উঠেছে। উমাদা ছাড়া সবাই হাজির। রত্নাকর দোকানের এককোনে বসল। সবাই আড়চোখে তাকে দেখছে। পল্টু বলল, কিরে চা খাবি তো?রতি তাকিয়ে হাসে। পল্টু বলল, পঞ্চাদা পাচটাকে সাতটা। একটু পরেই উমাদা এসে জিজ্ঞেস করে, রতি আসেনি?কোনে রতিকে দেখে পাশে বসতে বসতে বলল, আরেকটা চা বল। রতিকে জিজ্ঞেস করে, গেছিলি?কি বলল?
–তোমাকে বলবে বলল।
–আমাকে বলার কি আছে?একী মেয়ে দেখতে গেছিলি নাকি?
–এদের পছন্দ নয়।
–পছন্দ-অপছন্দের কথা আসছে কেন?
–আমি নাকি রাঙামুলোর মত দেখতে। মেয়ে আমার কাছে পড়লে কিছু ঘটে যেতে পারে।
সবাই হো-হো করে হেসে উঠল। বঙ্কা বলল, বোকাচোদা চেহারাখানা বানিয়েছে জব্বর। মাগী পটানো চেহারা।
–চুপ করতো। উমাদা ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, তোকে এসব বলেছে?
–আমাকে বলবে কেন?আড়ালে আলোচনা হচ্ছিল শুনলাম।
–ভেবেছিলাম তোদের একটা গুড নিউজ দেবো–শালা মেজাজটাই খারাপ করে দিল। উমাদা দুঃখ করে বলল।
–মেজাজ খারাপের কি আছে। ভাগ্যে থাকলে হবে। গুড নিউজটা কি?
–বেকার জীবন ঘুচল। কাল থেকে অফিসে যাবো। শুভ কি একটা বলতে যাচ্ছিল থামিয়ে দিয়ে বলল, হবে–সব হবে। তোরা মেনু ঠিক করে ফেল।
সুবীর হঠাৎ উঠে গেল। রাস্তার ওপারে বুকের কাছে বইয়ের গোছা তনিমা দাঁড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে। সুবীর বেরিয়ে যেতে বস্তির দিকে হাটতে থাকে। ব্যাপারটা বুঝতে কারো অসুবিধে হয়না। বঙ্কা বলল, ঠিক শালা নজরে পড়েছে।
–তোর এত গাড় ফাটছে কেন?শুভ বলল।
তনিমা ধীরে ধীরে হাটতে থাকে। গলির দিকে বাক নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। সুবীর আসতে জিজ্ঞেস করে, কি নিয়ে আড্ডা চলছিল?
–উমাদা চাকরি পেয়েছে। একদিন সবাইকে খাওয়াবে বলেছে।
দুজনে ধীরে ধীরে হাটতে থাকে। তনিমা জিজ্ঞেস করে, তুমি কবে চাকরি করবে?
–দাড়াও আগে গ্রাজুয়েশনটা শেষ করি।
–ঐভাবে গ্যাজালে হবে?পড়াশুনা করতে হবেনা?
–বাড়ীতে অনেক শুনেছি, তুমি আর জ্ঞান দিওনা তো।
গলায় ঝুলন্ত লকেটে হাত দিয়ে সুবীর জিজ্ঞেস করে, এটা নতুন কিনেছো?
তনিমা হাত দিয়ে হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, বেশি চালাকি করবে নাতো। আমাকে অন্য মায়ার মত ভেবোনা, বিয়ের আগে কিসসু হবেনা।
সুবীর ব্যাজার মুখ করে হাটতে থাকে। তনিমা বলল, আমি কিন্তু আর দশ মিনিট থাকবো।
–তোমাকে আজ হেভি দেখতে লাগছে।
–ফালতু কথা বলবেনা, ওসবে তনিমা সেনকে ভোলানো যাবেনা।
–কি ব্যাপার বলতো?কথা বললেই খচে যাচ্ছো?
–ফালতু কথা ভাল লাগেনা।
যা বলছে সব ফালতু?তাহলে কি বলবে, চুপচাপ হাটবে?সুবীরের মনে রতির কথাটা এল।
–জানো আজ একটা মজা হয়েছে।
–আবার ফালতু কথা?
–না শুনেই বলে দিলে। জানো রতিকে কি বলেছে?
তনিমা মুখ ঘুরিয়ে সুবীরের দিকে তাকালো, রতিকে নিয়ে আবার কোনো গল্প বানাবে নাতো?স্কুলে তনিমার সঙ্গে পড়ত রত্নাকর। ওর অদ্ভুত নাম নিয়ে মেয়েরা হাসাহাসি করত। ও গায়ে মাখত না।
–উমাদা ওকে এক বাড়ীতে ট্যুইশনি করতে পাঠিয়েছিল, ভাগিয়ে দিয়েছে।
–এর মধ্যে মজা কি হল?
সুবীর হাসতে হাসতে বলল, ওরা রাঙামুলোর মত চেহারা কাউকে রাখবেনা।
–তোমার বন্ধু সত্যিই লালটু দেখতে।
–লালটু?ঐটা তো দেখোনি?লাল্টু বেরিয়ে যাবে।
–মানে?
সুবীর বাহুর মাঝ খানে আঙুল রেখে বলল, আধ হাত লম্বা।
–ধ্যেত, খালি অসভ্য কথা। মুখে কছু আটকায় না। মুখ টিপে হাসে তনিমা।
–আমি মিথ্যে বলছি?
–ফালতূ কথা রাখো। কেন ডেকেছো বলো।
–দেখতে ইচ্ছে হয়না?তুমি ফোন ধরোনা কেন?
–কোচিং-এ থাকলে তুমি ফোন করবেনা।
–বাড়ীতে থাকলে করবনা কলেজে থাকলে করব না, তাহলে কখন করব?
–দেখা হচ্ছে ফোন করার দরকার কি?
–দেখা হলে সব কথা বলতে পারিনা।
–শোনো ফোনে উল্টোপাল্টা কিছু বলবেনা। এখন যাও আমার পাড়া এসে গেছে। কে দেখবে বাবাকে লাগাবে।
সুবীর দাঁড়িয়ে পড়ে। তনিমা একবার পিছন ফিরে দেখে চলতে থাকে। সুবি যা বলল তাকি সত্যি?অতবড় হয়?শরীরের মধ্যে শিরশির করে। পিকনিকে দেখেছিল রত্নাকর খুশিদির সঙ্গে গাছ তলায় বসে গল্প করছিল। সুবিটা খুব সেয়ানা কায়দা করে বুকে হাত দিতে গেছিল। লাজুক হাসি খেলে যায় তনিমার ঠোটে।
রত্নাকর কি করবে এখন?তার এই চেহারা সেকি নিজে করেছে?চেহারার জন্য ট্যুইশনিটা হলনা, ভাবতে খারাপ লাগছে।
কালিনাথ অফিস থেকে ফিরেছে রাত হল উমার দেখা নেই। মনীষা চিন্তিত, দেওরের জন্য তাকেই গঞ্জনা শুনতে হয়। মনে হচ্ছে দরজার কাছে খসখস শব্দ হচ্ছে। উমানাথ কলিং বেল বাজায় না। মনীষা দরজা খুলে দেখল যা ভেবেছে তাই মক্কেল দাঁড়িয়ে আছে। উমা ঢুকতে আলতো করে দরজা বন্ধ করে দিল। দেওরের দিকে তাকিয়ে রাগত স্বরে জিজ্ঞেস করে, কোথায় ছিলে সারাদিন?
উমানাথ মুখ টিপে হাসে। মনীষা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার বলতো?মনে হচ্ছে কিছু ব্যবস্থা হয়েছে?
উমানাথ অবাক। বৌদি কি করে বুঝল?
–ঠিক ধরেছো। আচ্ছা বৌদি তুমি কি করে বুঝলে?
–ভালবাসলে বোঝা যায়।
–তুমি আমাকে দাদার থেকে বেশি ভালবাসো?
–এবার ঠাস করে এক চড় মারব।
উমানাথ গাল পেতে দিল। মনীষা আলতো করে গাল চাপড়ে দিয়ে বলল, আমরা তিন বোন। কোনো ভাই নেই। ভাইয়ের জন্য আক্ষেপ ছিল বিয়ের পর আর আক্ষেপ নেই।
অন্য ঘর থেকে কালিনাথ হাক পাড়ে, মণি-ই।
–যাই ওদিক সামলে আসি।
–তুমি কি ভাবছো আমি কিছু বুঝতে পারিনি। কালিনাথ বলল।
–বোঝাবুঝির কি আছে?উমা এল দরজা খুলে দিলাম।
–আর কতদিন দাদার ঘাড়ে বসে খাবে?
–এ কি কথার ছিরি?ও তোমার ঘাড়ে বসে খাচ্ছে না।
–মানে?তুমি খাওয়াচ্ছো?
–নিজেই নিজের ব্যবস্থা করেছে।
কালিনাথ হা-করে চেয়ে থাকে। মনীষা পাশে বসে বলল, তোমার ভাই চাকরি পেয়েছে।
কালিনাথ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল, আমার কথা কিছু শোনেনি তো?
–না শুনলেও আমি গিয়ে বলব। মনীষা বলল।
–তবে রে। কালিনাথ বউকে জাপ্টে ধরে ঠোটজোড়া মুখে চেপে ধরে।
–উম–উম–কি হচ্ছে। সাহস দিন দিন বাড়ছে দেখছি।
মনীষা উঠে এ ঘরে এসে দেখল, নণ্টূ পড়া ছেড়ে চাচুর সঙ্গে গল্প করছে। বিরক্ত হয়ে বলল, কি ব্যাপার তুমি পড়া ছেড়ে উঠে এলে?
–মাম্মি চাচু চাকরি পেয়েছে। কে আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে?
উমানাথ বলল, বৌদি আমি দিয়ে আসব। তুমি শুধু নিয়ে আসবে।
মনীষা এদিকটা ভাবেনি। ঠাকুর-পো ছিল নণ্টুর স্কুল যাওয়া নিয়ে ভাবতে হয়নি। উমানাথ জিজ্ঞেস করে, বৌদি পাঁচশো টাকা হবে?
–টাকা দিয়ে কি করবে?
–সবাইকে বলেছি খাওয়াবো।
–খাওয়াবে, মাইনে পাও।
–আমি কথা দিয়েছি–।
–ঠিক আছে। আচ্ছা যদি সবাইকে বাড়ীতে ডেকে রান্না করে খাওয়াই?
–বাড়ীতে?চমকে ওঠে উমা। দাদা যদি–।
–সে তোমাকে ভাবতে হবেনা।
–তাহলে দারুণ হবে। উমা খুব খুশি হয়।
–কজন হবে?
–কজন আর শুভ বঙ্কা রতি–দশজন মত হবে। জানো একটা মজা হয়েছে। উমানাথ রতির ব্যাপারটা বৌদিকে বিস্তারিত বলল। রত্নাকরকে চেনে মনীষা, কয়েকবার এসেছে। মনে মনে ভাবে সত্যিই ছেলেটাকে দেখলে সব মেয়েই মজবে। জিজ্ঞেস করল, ও তো শুনেছি নাকি লেখালিখি করে?
–ঐ আর কি। কয়েক জায়গায় ছাপা হয়েছে। কদিন আগেই একটা গল্প ছাপা হয়েছে, “যখন বৃষ্টি নামলো। ”
–বাঃ নামটা তো বেশ কাব্যিক। দিও তো বইটা পড়বো। মনীষা বলল।
–রতির জন্য খুব খারাপ লাগে। লেখাপড়ায় খারাপ না কিন্তু ওদের অবস্থা খুব ভাল না।
ঠাকুর-পোর এই জিনিসটা মনীষার ভাল লাগে। মনটা ওর খুব নরম।
–ওর দাদা আছে না?শুনেছি ভাল চাকরি করে।
–ওর দাদাটা ভীষণ স্বার্থপর। বাড়ীটা প্রোমোটারকে দেবার জন্য মাসীমাকে চাপ দিচ্ছে।
মনীষা ভাবে কালিনাথ মুখে যাই বলুক ভাইকে খুব ভালবাসে। স্বামীর প্রচ্ছন্ন সায় না থাকলে সেকি উমাকে এত প্রশ্রয় দিতে পারতো? সবাই সমান হয়না। নাড়িকে যারা অস্বীকার করে তারা ভাল হতে পারেনা। স্বামী হিসেবে কালিনাথকে পেয়ে মনীষা খুশী।
–সুমন্তবাবুর বাড়িতে ট্যুইশনিটা পেলে উপকৃত হত। দেখতে রাঙামুলো–এটা কি কোন যুক্তি হল?
মনীষা হেসে বলল, দেখো ওদের মেয়ের হয়তো ছোকছোকানি আছে, তাই ভয় পাচ্ছে।
রত্নাকর শুয়ে শুয়ে ভাবে, উমাদা চাকরি পেয়ে গেল। ভাল খবর খুশি হয়েছে সে। উমাদার দাদা-বৌদি এত ভাল চাকরি না পেলেও ক্ষতি হত না। উমাদা তাকে খুব ভালবাসে। ব্যাঙ্কে কাজ করে ভদ্রলোকের বাড়ীতে উমাদাই পাঠিয়েছিল। সেও কি পড়াশুনা ছেড়ে চাকরির চেষ্টা করবে নাকি?উচ্চ-মাধ্যমিক পাস কে চাকরি দেবে?কলেজের পড়াটা যদি টেনেটুনে চালাতে পারত তাহলে নিশ্চিত পাস করবে সে বিশ্বাস আছে। কদিন পরেই জেনির পরীক্ষা তারপর আর তার যাবার দরকার নেই। মিলিটারি আণ্টি হঠাৎ কেমন বদলে গেছে। সেদিন উত্তেজনা বশত নিজেকে এক্সপোজ করে ফেলে লজ্জা পাচ্ছে হয়তো। কিন্তু রত্নাকর কি কাউকে বলতে যাচ্ছে? মুস্কিল হচ্ছে সেদিনের ঘটনার পর থেকে রত্নাকরের মেয়েদের ঐ জায়গা সম্পর্কে কৌতুহল ভীষণ বেড়ে গেছে। আবছা আলোয় মিলিটারি আণ্টিরটা ভাল করে দেখতে পারেনি। তাছাড়া আণ্টি এত হড়বড় করছিল, তখন তার হুশ ছিলনা। মেয়ে দেখলে চোখের সামনে অনাবৃত শরীর ভেসে ওঠে। আগে এমন ছিলনা। ঘুমে জড়িয়ে আসে চোখ।
আবছা আলোয় ছেয়ে আছে ঘর। মিলিটারি আণ্টী বাড়াটার ছাল ছাড়িয়ে একবার খোলে আবার বন্ধ করে। একসময় মুখে পুরে চুষতে লাগল। রত্নাকর পা ছড়িয়ে দিল। তলপেটের নীচে মৃদু বেদনা বোধ হয়। ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘড়িতে পাঁচটা বাজে। রত্নাকর বুঝতে পারে
পায়জামায় আঠালো পদার্থ জড়িয়ে আছে। বসে দেখল বিছানায় পড়েনি। রান্নাঘরে বাসনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে তার মানে ভবানীদেবী চা করছে। মা বরাবরই খুব ভোরে ওঠে। বিছানা থেকে নেমে বাথরুমে ঢুকে গেল রত্নাকর।
এই গল্পের পরবর্তী পর্ব
গল্পটি কেমন লাগলো এবং পরবর্তীতে কোন ক্যাটাগরির গল্প চান? কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ!