পবিত্রতা (২য় পর্ব)

এই গল্পের অংশ পবিত্রতা

আমি ইতস্ততভাবে বললাম-আসলে ধর্মে নিষেধ যে?
আপু-শোন। তা হলো গোড়ামি। আবদ্ধ করে রাখার জন্য। আমরা ভাইবোন। আমাদের ভালোবাসা বা ধর্ম কর্ম কি পোষাকেই চাপা পড়ে যাবে? স্বাধীন হতে শিখো সোনা। জানি তোমাকে কখনো সুযোগ দিইনি পৃথিবী জানতে। আর নয়। এখন আমি তোমায় সব সুযোগ দিব।আর তোমার কোন প্রশ্ন থাকলে আমায় সরাসরি বলবে।

আমি-সব প্রশ্ন কি আর বড় বোনের কাছে বলা যায় আপু?
আপু-তুমিই আমার একমাত্র আপনজন। তোমার সব আবদার আর শখ পূরণ করা আমার দায়িত্ব।প্রশ্নতো ছোট বিষয়।আমাকে কি আপন মনে করতে পারবেনা?
আমি-তুমি ছাড়া আর কে আছে আমার বলো আপু?কিন্তু ভয় হয় যদি আমার সারা জীবনের জমানো কথাগুলো তোমায় বোর করে বা কষ্ট দেয়?
আপু-কোন সমস্যা নেই।আমি অধীর আগ্রহ
নিয়ে তোমার সব আশা পূর্ণ করবো।
আমি- আচ্ছা। আমার মনে একটা ছোট্ট আশা আছে।
আপু-বলো বলো? এখনি পূরণ করবো সোনা। জান দিয়ে হলেও করবো।
আমি ইতস্তত করছি।আপু বলল- ঘাবরিও না। বেজিজক বলে ফেল।
আমি-আমার খুব শখ ছিল তোমায় নিয়ে আমাদের ভার্সিটি ঘুরবো। হলগুলো দেখব।আমি এখনও হল দেখতে পারিনি। তোমায় বলতেও সাহস পাইনি। কাল কি আমায় নিয়ে যেতে পারবে আপু?
আপু হঠাত উঠে দারাল। আমার দিকে হাত বাড়িয়ে বলল-এসো।
আমি হাত ধরে উঠলাম।
আমি-কি কোথায়?
আপু-কাল কেন?এখনই আমরা টিএসসি যাবো।
আমি- পাগল হয়ে গেছো? এখন কি করে?
আপু আমার হাত ধরে এগুতে এগুতে বলে- হাওয়ায় করে। আগে এসোতো।
বলে আমাকে নিয়ে বাসায় ঢুকল।
আপু-যাও রেডি হয়ে নাও। আমিও আসি।

বলে আপু তার রুমে গেল। আমি একটা টিশার্ট প্যান্ট পড়ে বের হলাম। ড্রইংরুমে বসে আছি এমন সময় আপু দরজা খুলে বেরিয়ে এল।আপু একটা টাইট জিন্স আর টিশার্ট পড়েছে।একদম হট লাগছে দক্ষিনি নায়িকাদের মতো। বুকটা সামনে উচু হয়ে আছে।এমনকি টিশার্ট এর নিচে ভেসেভেসে বোঝা যাচ্ছে ব্রার স্ট্রিপও। আমি প্রথমবার আপুকে এমন পোশাকে দেখলাম।আগে কখনো এমন ছিলনা আপু। কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে যদিও আমি কোন খারাপ নজরে দেখিনি। আপু বলেছে সুন্দর প্রকাশ করার কথা। যেহেতু আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা,তাই আপুর এই পোষাক আমার কাছে অবাস্তব লাগেনি।আমার দিক এগিয়ে এলো আপু।এসেই কষিয়ে আমার গালে একটা চড় বসাল। আমার পৃথিবী মুহুর্তে পাল্টে গেল। যে আপু এত আদর করছে, সে কেন মারল ভেবে। আমি অবাক হয়ে নিজের শরীরে ঝাকুনি সামলে আপুর দিকে তাকাতেই আবার অবাক হলাম। আপু কাদছে,চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ছে। সুন্দর চেহারায় পানি।আমি কিছু বলার আগেই আপু তার হাতে থাকা চিরকুট দেখিয়ে বলল-এসব কি হ্যা? পাগল হয়েছ তুমি?
আমি- আমার জীবনটা একদম একাকার হয়ে গেছিল আপুৃ আমার কেও ছিল না। তাই,,,,,
আপু-তাই বলে আত্মহত্যা?সেদিন তাহলে আমার ওপর হামলা না হলে আজ আমি তোমাকে,,,,,,,,, ওহ মাই গড। আমি একি করেছি। এতটাই নির্যাতন করেছি তোমায় যে তুমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছ।
আমি-সরি আপু।
আপু মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল।
আপু-সরিতো আমি। আমার মতো এত খারাপ মানুষ আর হয়না। নিজের ভাইকেও ভালোবাসিনি আমি।

আপু হুট করে দারিয়ে গিয়ে আমার কলার ধরে দেয়ালে ঠেকিয়ে ধরে দাত কিড়মিড় করে রাগে বলল-আর কখনো এমন করলে আগে আমাকে মারবে,তারপর যা খুশি কর
আমি-সরি আপু আর হবেনা এমন। এখন তুমিইতো আছো।
আপু কেদে আমায় জরিয়ে ধরল ও বলল- সরি সোনা। আমিও আর এমন করবো না। খুব ব্যাথা দিয়েছি,সরি। আমি জীবন ফিরে পেয়েছি তোমায় পেয়ে। আর তাই যদি এমন কিছু জানি,তাই ভয়ে পেয়ে গেছিলাম।
বলে আমার গালে আদর করে হাত বুলিয়ে দিল। ও আমাকে অবাক করে দিয়ে আপু গালে চুমু একে দিল। আমিতো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম আপুর এ কাজ দেখে।

সব স্বাভাবিক হলে আপু বলল-আচ্ছা বলো সোনা কেমন লাগছে আমাকে?
আমি-খুব সুন্দর লাগছে আপু। একটা কথা বলি যদি কিছু মনে না কর?
আপু- কি মনে করবো। বলেছিতো যা খুশি মন খুলে বলো।
আমি- তোমায় বাঙালি পোষাকের চেয়ে ওয়েস্টার্নেই বেশি ভালো লাগে।
আপু আমার দিকে তাকাল।তবে চোখ দেখে বুঝলাম যেন তৃপ্তির হাসি দিল।
আপু-তোমার ভালো লাগে ওয়েস্টার্ন ড্রেসে মেয়েদের?
আমি-অন্য মেয়েদের কথা বলিনি আপু। আমি শুধু আমার বোনের কথা বলেছি।আর কারও বেপারে আমি কেন ভাবতে যাবো বলো?
আপু খুশিতে আমার হাত ধরে বলল-ডান। আজ থেকেই আমরা ওয়েস্টার্ন।
আমি-আমরা মানে?
আপু-তুমি আমিতো একই তাইনা?
আমি-তা ঠিক।

আপু-আজ থেকে বোরিং দেশি পোশাক বাদ। আমার ভাই যা পছন্দ করেছে তাই হবে।
আমি- আপু, আমি তোমায় জোর করছিনা কিন্তু।তোমায় সব পোশাকেই বিশ্বসুন্দরি থেকে কেও সরাতে পারবে না। ওয়েস্টার্নে তোমার কমফোর্টেবলনেস দেখে বলেছি।
আপু-এটাইতো। আমার ভালোই লাগে।
এসব কথা শেষে আপু আর আমি বাসা থেকে বের হলাম। তখন রাত আটটা বাজে। আমরা এত টাকা সত্বেও কখনো গাড়ি কিনিনি। প্রয়োজন পড়েনি।
আপু-কিভাবে যাবে? গাড়ীতে নাকি বাসে?
আমি-ঠিক বুঝতে পারছি না।
আপু-আচ্ছা চলো আজ ইনজয় করি? বাসে করে যাওয়ার মজা নিই? কেমন?
আমি-আচ্ছা।
আমরা খিলক্ষেত থেকে বাসে উঠলাম।কোন জায়গা ছিলনা বসার জন্য। গায়ে ঘেসে যেতে হচ্ছে আমাদের।কেও চিন্তাও করতে পারবেনা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক আমরা। বাসে আপু আর আমি একসাথে।লোকের চাপে আমাদের গায়ে গা লেগে গেল। হঠাত একটা ধাক্কায় আপুর পাছায় আমার হাত লেগে যায়। আপু দ্রুত পিছনে তাকায় রাগে। কিন্তু আমায় দেখে আপু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মুচকি হাসল। আমি ভয়ে শেষ। কিন্তু আপুর হাসির রহস্য মাথায় ঢুকল না। আপু আবার সামনে দিক ফিরে গেল।প্রায়ই ধাক্কায় আমার আর আপুর পাছার পাশ ঘষা খাচ্ছিল। কিন্তু আপু যেন স্বাভাবিক। আমরা অনেকক্ষণ পর শাহবাগ এসে পৌছলাম।
আপু-বাব্বা। কি জ্যাম এই রাতের বেলাও। তুমি ঠিক আছো?
আমি-হ্যা আপু।
আপু-আচ্ছা চলো।
আপু রিকশা ডাকল। একজন বয়স্ক লোক এলো।
আপু-চাচা, যাবেন ক্যাম্পাসে?
চাচা-জে আম্মা।কোন হলে?
আপু-রোকেয়া।
চাচা-জে। আসেন আম্মা।
আমরা রিকশা চড়ে বসলাম। আমার মন খুশিতে ভরে গেল। চোখ ভরে এলো। আপু তা দেখে বলল-সোনা, কি হয়েছে? কাদছো কেন?
আমি-প্রথমবার এতো ভালো লাগছে আমার। তোমার সাথে ঘুরতে এসেছি।

আপু আমার চোখ মুছে তার দিকে টেনে বুকে নিল। আমার মাথা আপুর বুকে রাখল। নরম ডাসা দুধের সাথে ব্রা স্ট্রিপের স্পর্শ আমাকে ছুয়ে গেল।
আপু-এখন থেকে আমরা আরও মজা করবো। জীবনেও আর তোমায় কাদতে দিবো না। আমার বুকে বুকে রাখবো তোমায়। আর পিছনের কথা ভেবে মন খারাপ করবে না কেমন?প্রমিস মি।
আমি- আচ্ছা আপু। প্রমিস ইউ। আই লাভ ইউ আপু।
আপু-ওহহহ মাই গত সোনা। আই লাভ ইউ টু। অবশেষে তুমিও আমাকে ভালোবাসি বললে।
আমি- আমিতো তোমাকেই ভালোবাসি আপু।
আপু-কিন্তু কখনো প্রকাশ করো না। বলো না মুখে। এখন থেকে কোনো ফিলিংস চাপা রাখবে না। প্রকাশ করবে। মনে রেখো আমি তোমার ডব ফিলিংস, আবদার, ইচ্ছে পূরণ করবো।
আমি- আচ্ছা আপু।
আপু আবারও বুকে নিল আমার মাথা।আপুর বুকের বিট আমি শুনতে পাই আর নরম দুধের চাপও পাই। কিন্তু আমি কোন খারাপ চিন্তা করিনা।
রিকশার জায়গা কম বলে আমাদের গায়ে গা লেগে আছে একদম শেটে। আপু হঠাত একটা কল করল।
আপু-শোন। আমি আমার ভাইকে নিয়ে আসছি হলে। তোরা কোথায়?
ওপাশ থেকে কি বলল শুনিনি।কিন্তু পজিটিভ মনে হল। আমরা হলের সামনে গিয়ে দেখি গেটে ১০-১৩ জন মেয়ে দারানো। সবাউ আপুর বয়সী। আপুতো ভার্সিটি শেষ করেছে। ওরা কি জানিনা।
রিকশা থেকে নামতেই সবাই আপুকে জরিয়ে ধরল। সবাই একসাথে বলে উঠল- এতদিন কোথায় ছিলি? কত মিস করেছি তোকে।
আপু- সব বলবো। আমরা কি ভিতরে যেতে পারি? আমার ভাইকে ঘুরতে আনলাম।
সবাই হেসে দিল। একজন ব্যঙ্গ করে বলল-আমরা কি ভেতরে যেতে পারি? না তুই পারবি না। আমাদের ভাইকে নিয়ে আমরা গেলাম। ছাগল! তুই আসবি আবার পারমিশন কিসের?
সবাই আমাকে ঘিরে ধরে বলল- কেমন আছো এখন ভাইয়া?
আমি- ভালো আপু।

সবাই আমাদের ভিতরে নিয়ে গেল। এতক্ষণ খেয়াল করিনি। সব আপুরা কেও নাইটগাউন, কেও টাওজার গেন্জি পড়া। আবার দুজন দেখলাম হাফপ্যান্ট আর টিশার্ট পড়া। সবাই আঁটসাঁট পোশাক পড়ে।
রোকেয়া হলে ছেলেদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু আমি ঢুকেছি ভেবেই ভালো লাগছে। গেটের ভিতরে ঢুকেই জীবনের সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজের একটা আমার সামনে। হলের বিল্ডিং এর ছাদ থেকে মাটি পর্যন্ত একটা বিশাল ব্যানারে আমার ছবি। আমি থ হয়ে দারিয়ে গেলাম। সবগুলো তলা থেকে বারান্দায় মেয়েরা এসে দারানো আর সবার হাতে আমার ছবি।আমি কিছু বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে আমার সাথে। আমি আপুর দিকে তাকাতেই আপু ইশারায় বলল- সারপ্রাইজ মাই জান।
ব্যানারে লেখা দ্য লাইফ সেভার।
আমাকে নিয়ে মেইন হলে গেল সবাই। এত মেয়ে একসাথে কখনো দেখিনি। সবাই নাইটড্রেস পড়া।

আমাকে নিয়ে সবাই হইহুল্লোড় করছে।আমার প্রশংসা করছে। এমন সময় হলে প্রবেশ করলো গোটা দশেক মহিলা। তাদের বয়স ৩৫-৫০ এর মাঝে। ওনারা কেও শাড়ী কেও থ্রি পিচ পড়া। সবাই দারিয়ে সম্মান করল। আমিও করলাম। তারা এসেই আপুর কাছে এলো। আপুও তাদের জরিয়ে ধরল। সবাই কথা বলছে আপুর সাথে। আপুর কপালে চুমু আকল। কিছু দূরেও শোনা যাচ্ছেনা কি বলছে তারা। আপু আমার দিকে তাক করে কি যেন বলল তাদের। জানলাম তারা সবাই প্রফেসর। এগিয়ে এসে আমাকে ঘিরে ধরল। সবাই আমার প্রশংসা করল ও ধন্যবাদ দিল। সাথে আমার জন্য গিফট ছিল অনেক। এর মাঝে সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল- তুমি নিজের জীবন বাজি রেখে বোনকে বাঁচিয়েছ।তুমি সেভার ফর উইমেনস। আমাকে সবার সামনে একটা ক্রেচও দেওয়া হল।
আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এতকিছু। হঠাত মাইকে শব্দ শুনলাম। দেখি আপু মঞ্চে হাতে মাইক্রোফোন।আপুর চোখে পানি।

আপু-নিজেকে সেদিন যতটা দূর্ভাগ্যবান মনে হয়েছে,ঠিক ততই সৌভাগ্য আমার। এত অসহায় হয়ে পড়েছিলাম আমি। কিন্তু নিজের জীবন বাজি রেখে আমাকে বাঁচিয়েছে আমার ভাই। ওকে আমি অনেক কাদিয়েছি সারা জীবন, কখনো ভালোবাসি নি। কিন্তু ও তাও একটাবার নিজের কথা ভাবেনি। ভাবেনি ওর জীবন এখানে শেষ শিওর মৃত্যু জেনেও আমাকে পশুগুলোর হাত রেখে রক্ষা করেছে তা সবাই জানে। না হলে আজ আমি এখানে দারিয়ে বক্তৃতা দিতে পারতাম না। রক্তাক্ত শরীর নিয়ে জ্ঞান হারানোর আগ পর্যন্ত ও লড়াই করেছে। আর নিজেকে মৃত্যুর মুখে দিয়ে আমাকে বাঁচিয়েছে। ২০০ দিন পর কোমা থেকে বেরিয়ে আমাকে আবার উপহার দিয়েছে আমার ভাই, আমার জীবন, আমার একাকিত্ব দূর করার প্রতিশ্রুতি আমার লক্ষি সোনা। আই লাভ ইউ সো সো মাচ সোনা ভাই, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। সারাজীবন আমি তোমার কৃতজ্ঞ থাকবো।জীবন দিয়ে মনপ্রানে তোমার পাশে থাকবো আজীবন। আই লাভ ইউ।
বলে আপু মাইক্রোফোন ফেলে দৌড়ে এসে প্রায় ছশ মেয়েদের সামনে আমাকে জরিয়ে ধরল। আমার কপালে ও গালে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল। আমি এতক্ষণে আপুর কথাগুলোয় চমকে আছি। নিজের কানকে ও চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না শুধু আমার জন্য এত আয়োজন। সবার সামনে আপু আমাকে চুমু দিচ্ছে তা খেয়ালই নেই।

পরে আমাকে নিয়ে কেক কাটানো হলো। আমার আর আপুর ছবি। আপুকে নিয়ে কেক কাটলাম আমি। পরে ওখান থেকে রাত তিনটায় বের হলাম।সবাই আমাকে গিফটে ভরিয়ে দিয়েছে
আর আমাদের গেটে এসে সবাই সেলুট দিল। আমিও ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
ওখান থেকে এত কিছু গিফট নিয়ে বাসে সম্ভব না। তাই গাড়ী নিতে চাইল আপু একটা।এমন সময় নিলা প্রফেসর এসে বলল- এই দিশা। তুমি আমার গাড়ী নিয়ে যাও। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি।
আপু-থাক ম্যাম। চলে যাবো।
ম্যাম বলল- কোন দরকার নেই। এই নাও চাবি।
আপু-চাবি যখন পেয়েছি,আমিই চালাই গাড়ী?
ম্যাম- আচ্ছা যাও।
আমি- কিন্তু ম্যাম,আপনি কি করে যাবেন?
ম্যাম বলল- সো সুইট। তুমি এত চিন্তা করো আমি চলে যাবো। সাবধানে যেও।
আমি কখনো আপুকে গাড়ী চালাতে দেখিনি। জানিই না আপু পারে। পিছনে সব জিনিশ রেখে ড্রাইভিং সিটে আপু ও আমি পাশে বসলাম। আপু শাঁইশাঁই করে গাড়ী চালাচ্ছে। এর মাঝে একটা কথাও বলল না আপু। আমিও কেমন এখনো অবাক রেশ কাটাতে পারছিনা।হঠাত গাড়ী থামল।আমার চোখ আগেই আপুর দিকে।

আপু-কি জান? কি ভাবছো এত?
আমি-এসব কেমন করে?
আপু মুচকি হেসে বলে-তুমি যা করেছ তার জন্য এটা কিছুই না। চাইলে জানটাই দিতে পারি।
আমি-তাহলে কি করে হলো?
আপু- কেন সোনা? কেন?
আমি-এই আমাকে জান বলে ডাকলে। আবার জান দিয়ে দিবে বলছো।
আপুর মুচকি মারাত্মক হাসি দিয়ে বলল-আমার দুষ্টু জান।উম্মাহ।
আমার গালে চুমু দিল।
আমি-আপু,সবার সামনে সোনা, জান এসব কেন বলো?আমার লজ্জা লাগে।
আপু-ইশশশশ। কি লজ্জা আমার সোনার!!!! এসো বের হও গাড়ি থেকে।।।।
গাড়ী থেকে বেরিয়ে দেখি হাতিরঝিলে আমরা। আমরা বোনেটে বসি।
আমি- আপু, বাসায় যাবে না?
আপু- যাবো। পরে যাবো। একটু কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করি। কেন ভালো লাগছে না আমার সাথে ডেটে?
আমি লজ্জায় লাল হয়ে বললাম-ডেট????
আপু- হ্যা। ইট ইস দ্য ফার্স্ট ডেট অফ আস।ডোন্ট ইউ লাভ মি?
আমি-ইয়েস আই লাভ ইউ আপু।
আপু-সো দেন দিস ইজ ডেট। ওকে?????
আমি-ওকে আপু।
আপু হটাত করে আমার হাত ধরে বলল-এই ফুচকা খাবে?
আমি মাথা নেড়ে হা বললাম। আপু আমার হাত ধরে ব্রিজের ওপর ফুচকার দোকানে নিয়ে গেল।দোকানদার আপুকে দেখেই চিনতে পারল। বলল-আরে আম্মা আপনে এতদিন আহেন নাই কেন?
আপু- এইযে আমার ভাই। এই জন্য।
দোকানদার-উনি? আরে আগে বলবেন না? বাবা আসেন বাবা।

উনি তোরজোড় করে গলায় ঝোলানো গামছা দিয়ে আমার জন্য চেয়ার মুছে দিলেন।
বাকি লোকজন হা করে দেখছে।
আমি এবারও অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকালাম।আপু মুচকি হেসে জানান দিল এমনই হবে আরও।
আপু-মামা, আমাদের জন্য সবচেয়ে স্পেশাল দই ফুচকা দাও।তবে এক প্লেট।আমরা ভাইবোন একসাথে খাবো আজ। দোকানি- জে আম্মা।
আমি আপুর দিকে তাকিয়ে বললাম-থ্যাংকইউ আপু এতো গিফটের জন্য। আর এত সুন্দর মুহুর্ত আমাকে উপহার দিলে বলে।
আপু- তোমার জন্য আমি সব করতে পারি সোনা। সব কিছু। তুমি চাইলে জীবন দিতেও একবার চিন্তা করবো না
ফুচকা এসে গেল।
আমি- এক প্লেট কেন আপু?
আপু-আমরা একসাথে খাবো।আর আমি তোমাকে খাইয়ে দিব।
আমার সাথে খেতে সমস্যা আছে নাকি?
আমি- মোটেও না। এতদিন তুমিইতো খাইয়ে দিয়েছ।

আপু একটা ফুচকা আমাকে দিল।আরেকটা নিতে যাবে, তখন আমি একটা ফুচকা নিয়ে আপুকে খাইয়ে দিলাম।এরপর একটা কামর দিয়ে বাকিটা আপুকে দিয়ে দিলাম। অটোমেটিক একটা বোঝাপড়া হয়ে গেছে আমাদের ভিতর।আমরা বেশ কয় প্লেট খেয়ে পেট ভারি করে ফেলি। গাড়ীর কাছে আবার এসে বোনেটে বসলাম।টাইট টিশার্ট আর জিন্সের কারনে ভরা পেটের একটা ফোলা ফোলা ছবি আপুর। আমি আপুকে দেখিয়ে বললাম-দেখো তোমার পেট ফুলে ডাম্বেল হয়ে গেছে।
আপু পেটের দিকে তাকিয়ে পেট হাতিয়ে বলল-তোমার পেটও হয়ে গেছে। আজ খুব বেশি খাওয়া হয়ে গেছে।
এরপর আপু নিজের পেটে ধরে কি যেন ভাবল ও মনে মনে মুচকি হাসছে।
আমি- কি ভাবছো আপু? হাসছো যে?
আপু-আমার পেট দেখে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের মতো ফিল হচ্ছে তাইনা?
আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম।
আমি-যাও আপু। কি বলো এসব?
আপু-না, সিরিয়াস। ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ধরে দেখো।
আমি- না না থাক আপু।
আপু জোর করে আমার হাত তার পেটে রেখে বলল-আরে ধরে দেখোইতো।

আপুর পেটে হাত রাখতেই আপুও কেমন কাপুনি দিয়ে উঠল আর পেটটাও কাপছে। আপুর বুকের উঠানামা কেমন বেড়ে গেল।আমার হাত কাপছিল নার্ভাস হয়ে। বুকে একটা ভয় কাজ করছিল। তখন আপু আমার দিকে কেমন একটা উদাস নজরে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে আমার হাত তার পেট থেকে সরিয়ে নিল ও বলল-চলো বাসায় যাই সোনা।
আমি বুঝলাম না কি হলো।
আমি-কি হয়েছে আপু?

আপু কোন কথা বলছে না। আবারও জানতে চাইলাম।কিন্তু কোন কথা বলছে না। গাড়ী বাসায় এনে পার্ক করে বাসায় ঢুকল। আমি আপুকে জিগ্যেস করছি কিন্তু কোন সারা নেই আপুর।চোখে পানি। আপু নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকে দিল। ভিতরে আপুর কান্নার আওয়াজ পাচ্ছি আমি। জীবনে প্রথমবার আপুর কান্নার সম্মুখীন হলাম আমি। আমি দরজা টোকা মেরে বললাম-আপু কি হয়েছে প্লিজ বলো। আমি আর কখনো তা করবো না। আমি কি করেছি আপু?

অনেক আকুতির পর আপু দরজা খুলল। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আমি আপুকে জরিয়ে ধরলাম ও বললাম-প্লিজ আপু আমার সাথে এমন করোনা। সারা জীবন তোমায় পাইনি। আর এখন এভাবে আমার সাথে কেম এমন করছো আপু?
আপু-তুমিইতো চাওনা আমি থাকি? সামান্য পেটে হাত দিতে তোমার হাত কাপল। বোনের পেটে হাত দিয়েছ। বাইরের কোন মানুষকে নয়। এতে এতো নার্ভাস মানে তুমি আমাকে আপন ভাবোইনা।
আমি-না আপু এমন না। আমি একটু নার্ভাস ছিলাম। কখনো এমন ধরিনিতো তাই। কিন্তু তুমি আমার সবচেয়ে আপন আপু। এমন বলোনা।
আপু-আর কখনো যদি এমন করো,তাহলে আমাকে হারাবে।
আমি আপুর মুখে হাত চেপে বললাম-এমন বলোনা আপু। আর এমন করবো না।
আপু আমার হাতে চুমু দিল। কেন যেন এই চুমুটা আমার বুকে একটা ঢেও তুলল। হঠাত কেমন আপুকে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে করল।আমি অটোমেটিক বললাম-আপু, তোমায় একটু জরিয়ে
ধরতে পারি প্লিজ?

আপু আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল-আমাকে নয়তো আর কাকে ধরবে বলো?কখনো জিগ্যেস করতে হবে না সোনা।
আমি-তোমার বুকে আমার মাতৃস্নেহ পাই মনে হয় আপু। খুব ভালো লাগে আমার।তোমার বুকে সারাজীবন ঠাই দেবে আমায় আপু?
আপু-এ বুকের মাঝে শুধু তোমারই জায়গা সোনা। আর কেও এ

এই গল্পের পরবর্তী পর্ব

গল্পটি কেমন লাগলো এবং পরবর্তীতে কোন ক্যাটাগরির গল্প চান? কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ!

Related Posts

Leave a Comment

error: Content is protected !!