খাবার টেবিলে বসে একটু আগে বলা রতির কথাগুলো নিয়ে মনে মনে নাড়াচাড়া করতে থাকে খুশবন্ত। দেবাঞ্জন আভিজাত্যের বেড়া ডিঙোতে পারেনি এর উল্টোটাও হতে পারত। সুচী অন্তরাল ছিন্ন করে বেরোতে পারেনি কিম্বা মানুষের অনেক ইচ্ছে আমরণ সুপ্তই থেকে যায় বাস্তবের মাটিতে অঙ্কুরিত হয়না। রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে। মনকে উদাস করে দেয় কথাটা। রত্নাকর আড়চোখে খুশীদিকে দেখে, আনমনাভাবে যখন হাত ভাজ করে মুখে খাবার তুলছে হাতের গুলি ফুলে উঠছে ছেলেদের মত।
চোখাচুখি হতে খুশবন্ত জিজ্ঞেস করল,রতি তোর রাতে রুটি খেতে অসুবিধে হয়?
–কিছু একটা খেতে পেলেই হল,আমার ওসব অভ্যাস হয়ে গেছে। কিছুক্ষন পর জিজ্ঞেস করল,খুশীদি মোবাইলটা বন্ধ করে রেখেছো,জরুরী ফোনও তো আসতে পারে। বিয়েতে যাইনি উমাদাও ফোন করতে পারে।
–খেয়ে ওঠ,জরুরী ফোন দেখাচ্ছি।
খাওয়া সেরে রত্নাকর ঘরে ঢুকে বিছানা ঠিক করে শোবার উদ্যোগ করছে,খুশবন্ত ঢূকে ওর হাতে মোবাইল দিয়ে বলল,কথা বল।
রত্নাকর মোবাইল কানে দিয়ে হ্যালো বলতে ওপার হতে মেয়েলী কণ্ঠ ভেসে এল,সোম হিয়ার?
–হ্যা,আপ?
— এ্যাড্রিয়ান,ভেরি হরনি প্লীজ টু-মরো–।
কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখল খুশীদি তার দিকে হাসি-হাসি মুখে তাকিয়ে,লজ্জা পেয়ে রত্নাকর ফোন ফিরিয়ে দিল। খুশবন্ত বলল,শুয়ে পড়। তোকে একটা অন্য সিম দেবো। তুই উমানাথকে ফোন করে নতুন নম্বর জানিয়ে দিবি। গুড নাইট।
রিলিফ সোসাইটি থমথম করছে। মনিটরে চোখ রেখে আম্মাজী ওরফে আন্না পিল্লাই বসে দেখছেন মিথিলা ইলাজ করছে। ফোন বাজতে ধরে বললেন,আমার বাচ্চা–।
–আম্মাজী কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করছি কিন্তু সুইচ অফ।
–আপনার জন্য দুইচ অন করে রাখবে?রাবিশ।
–ডেরাতে নেই,বিছানাপত্তর আছে। নজরদারি চলছে–। নিত্যানন্দ ঘোষ বলল।
–একটা মানুষ হাবিস হয়ে গেল?খবর না থাকলে ফোন করবেন না। বিরক্ত আম্মাজী ফোন কেটে দিলেন। ল্যাণ্ড লাইন বেজে উঠল,বলছি….শুনুন মিসেস আগরবাল, ওভাবে হয়না কে ইলাজ করবে সোসাইটি ঠিক করবে….আনন্দ বিজি আছে…ফোনে নয় অফিসে এসে কথা বলবেন…গুড নাইট।
আম্মাজী “ল্যাসিবিয়াস আউতর” বলে গজগজ করতে করতে খাস কামরায় ফিরে মনিটরে চোখ রাখলেন। মিথিলা খাটে চিত হয়ে পা ছড়িয়ে দিয়েছে। দুই উরুর ফাকে মুখ গুজে লোকটা চুষছে। দেখতে দেখতে আম্মাজীর বাচ্চার কথা মনে পড়ল। যখন চুষতো জরায়ুতে শুরশুর করত। অমৃত রসের জন্য কি করতো। এখন মনে হচ্ছে ওকে এখানে ঘর দিয়ে রাখলে আজ এমন হতনা। একটা ছেলে সোসাইটির নীচে ঘুরঘুর করছিল সিকদার বলল, তাকে এ্যারেস্ট করেছে। ছেলেটি মুসলিম বলেই সন্দেহ হয়েছিল। পুজোর মুখে আরো সতর্ক হতে হবে।
সকাল হতে ঠেলা গাড়ীতে আরেক ঠেলা বাঁশ এল। প্যাণ্ডাল বাধা শুরু হয়ে গেছে। এবারে পুজোর দায়িত্ব নিয়েছে মেয়েরা। বেলাবৌদি সম্পাদক হয়েছে। শুভ একটা বেসরকারী ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে। হুগলীতে ব্যাঙ্ক যাতায়াতে অনেক সময় লেগে যায়। বেসরকারী ব্যাঙ্ক বলে ইতস্তত করলেও শেষ পর্যন্ত দেবযানী আণ্টি বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। পুজোর ঠিক পরেই নভেম্বরে বিয়ে ঠীক।
বিয়ে ঠিক হবার পর রোজির সঙ্গে ফোনে যা একটু কথা হয় কিন্তু চাক্ষুষ দেখা হয়না। রতিদের ফ্লাট সম্পুর্ণ হয়নি তারই মধ্যে দোতলার একটা ফ্লাট তাগাদা দিয়ে বাসযোগ্য করে দিবাকর সপরিবারে সত্যনারায়ন পুজো করে ঢূকে পড়েছে। আল্পনাবৌদিও মেয়েদের সঙ্গে চাঁদা তুলতে বের হয়। একরকম নিরুদ্দেশ হলেও এখনো মাঝে মাঝে ঠাকুর-পোকে নিয়ে আলোচনা হয়,তখন অস্বস্তি বোধ করে আল্পনাবৌদি। মনীষা একদিন জিজ্ঞেস করেছিল,ওর দাদা খোজখবর নিয়েছে কিনা?কোথায় খোজ নেবে,দাদার সঙ্গে কোনোদিন যোগাযোগ রাখতো?তা ছাড়া তার নিজের সংসার আছে,কোনদিক দেখবে বলুন?ঠাকুর-পোর আক্কেল দেখুন,আরে দাদা কি তোর শত্রূ?
নণ্টূকে স্কুল বাসে তুলে দিতে বেরিয়ে গেল উশ্রী। বিয়ের পর এই দায়িত্ব নিজে যেচে নিয়েছে। উশ্রীর ইচ্ছে চাকরি করার,উমানাথ আপত্তি করেনি। কোনো স্কুলে যদি চাকরি হয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খুশবন্ত কাউর খবর পেয়েছে তার একজন খবরি গ্রেপ্তার হয়েছে। ছেলেটা মুসলিম ছিচকে পকেট্মার এলাকার খবরাখবর দিত। সোসাইটির উপর নজর রাখতে বলেছিল। কদিন পর মহালয়া, তার আগেই সন্দীপন প্রকাশিত হবে। পুজো সংখ্যায় রতির উপন্যাস থাকবে আগেই জানিয়েছিল বাদলবাবু। বিজ্ঞাপন যোগাড় করে দিয়েছে খুশবন্তকাউর। রতি নিয়মিত লিখছে,খুশবন্ত বাস্কেটে ফেলে দেওয়া বাতিল কাগজগুলো কুড়িয়ে পড়ে রতি জানেনা। একদিন একটা লেখায় নজর আটকে যায়। “স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছিল তখন এক জলপরী টেনে তুলে তাকে নব জীবন দেয়। ” জলপরী কে,কার কথা বলছে তার কথা কি?সময় পেলে ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করবে ভেবে রেখেছে। গুরু নানকের ছবিতে প্রণাম করে বেরিয়ে গেল খুশবন্ত কৌর।
রত্নাকর ঘরে বসে লিখছে। জানকি মাসী ঢুকে জিজ্ঞেস করল, সাহেব চা দেবো?
খুশীদির সঙ্গে একটু আগে চা খেয়েছে,তাহলে এখনই আবার চায়ের কথা বলছে কেন?মনে হয় মাসী তার সঙ্গে গল্প করতে চায়। রতি লেখা থেকে মুখ তুলে হেসে বলল,দাও। জানকি চা নিয়ে এসে টেবিলে রেখে মেঝেতে বসে পড়ল।
রত্নাকর চায়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করল,মাসী কিছু বলবে?
জানকি ইতস্তত করে আঁচলের গিট খুলে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলল,একটু পড়ে দেবেন?
রত্নাকর দেখল ইংরেজিতে লেখা একটা চিঠি। অনেক ভুল থাকলেও বুঝতে অসুবিধে হয়না। নীচে স্বাক্ষর সুভদ্রা। রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,সুভদ্রা কে?
–আমার মেয়ে।
–তোমার মেয়ে কতদুর লেখাপড়া করেছে?
–বেশি না,এটা জামাই লিখে দিয়েছে। জানকি বলল।
ছোটো কয়েক লাইনের চিঠি,রত্নাকর পড়ে বলল,মাসী ভাল খবর। তোমার মেয়ে মা হতে চলেছে,তোমাকে পুজোয় যেতে লিখেছে,সবাই ভাল আছে।
জানকি চুপ করে কোন ভাবনায় ডুবে যায়। রত্নাকর ভাবে মাসীর কি মন খারাপ হয়ে গেল? —তুমি খুশি হওনি?
–খুশি হবনা কেন,ম্যাডমরে বলি ছুটি নিতে হবে,যাতায়াতের খরচ পুজোয় তো খালি হাতে যাওয়া যায়না। আপনি বসেন আমি আসিছি।
জানকি মাসী চলে যাবার পর রত্নাকর লিখতে বসে কিন্তু লেখা এগোয় না। মনটা পুরানো দিনে ঘোরাফেরা করে। কত মুখ মনে পড়ে,পাড়ায় এখন পুজোর ব্যস্ততা। কল্পনায় দেখতে পায় দল বেধে চাদা তুলতে বেরোচ্ছে সবাই। চ্যারিটিকে কেন্দ্র করে পাড়া আরো সংগঠিত। কেউ কি তার কথা ভাবছে?নাকি আর পাচটা ঘটনার মত হারিয়ে গেছে বিস্মৃতির অন্ধকারে।
বিয়ের পর উমাদা কি আগের মত সময় দেয়? ফ্লাট অনেকটা হয়েছিল দেখে এসেছে এখন কি অবস্থা কে জানে। সরদার পাড়ায় সে থাকেনা বাবুয়া এতদিনে নিশ্চয় জেনে গেছে। দাদাও জানবে,খোজাখুজি করছেনা তো?দাদা বরাবর এমন ছিল না,এখন রাতারাতি কেমন বদলে গেছে। খুশীদির সঙ্গে দেখা না হলে এতদিনে কোন অন্ধকারে তলিয়ে যেত ভেবে শিউরে ওঠে।
নতুন জীবনের আস্বাদ পেয়েছে কিন্তু ভয় হয় কতদিন স্থায়ী হবে?এবারের শারদীয়ায় তার লেখা বেরোবে,পারমিতা বা সোমলতার হাতে পড়তেও পারে। বেলাবৌদির ম্যাগাজিন কেনার অভ্যাস আছে,তার নাম দেখে ভাববে একী সেই রত্নাকর?ম্লান হাসি ফোটে মুখে। খুশীদির আসার সময় হয়ে এসেছে,এখন আবার জানকি কোথায় গেল?
মনে হল জানকি এল। একটা প্লেটে দুটো রসগোল্লা সাজিয়ে জানকি এসে বলল, সাহেব মিষ্টিমুখ করেন।
–এসব আনতে গেলে কেন?
–এতবড় একটা খপর দেলেন। জানকির শরীর থেকে যেন উচ্ছ্বাস চুইয়ে পড়ছে।
সোসাইটীতে উপাসনা মন্দিরে সাজসজ্জা সম্পুর্ন। প্রদীপ জ্বলছে চন্দন ধুপের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। একে একে লোকজন আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন খবর আম্মাজীর মনকে আলোড়িত করলেও বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায়না। শান্ত সমাহিত স্মিত হাসিতে ভরা মুখ। চারতলায় অভ্যর্থনা কক্ষে কয়েকজন মহিলা বসে আছে। এক একজনের এক একরকম উপসর্গ ইলাজ করাতে এসেছে। অফিসের দায়িত্বে রাগিনী।
কিছু কিছু খবর তার কানে এসেছে। রঞ্জাও খোজ করছিল আনন্দ এখানে আসে কিনা?ব্রহ্মানন্দ মেঘানন্দ সিদ্ধানন্দ এসে গেছে,সবাই এরা পুরানো। বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এদের আনা হয়েছে,এখানে তাদের নতুন নামকরণ করা হয়। সবার নামের শেষে আনন্দ,আনন্দ বিতরন করাই এদের কাজ। বয়স সবারই চল্লিশের নীচে তার বেশি হলে চলে যেতে হয়।
ব্রহ্মানন্দকে তিন নম্বরে এবং সিদ্ধানন্দকে পাঁচ নম্বরে যেতে বলল রাগিনী। ব্রহ্মানন্দ পেশেণ্টের ইতিহাস দেখে বিরূপ। বয়স পঞ্চাশের উপর,কিন্তু এ ব্যাপারে তার মতামতের গুরুত্ব নেই। আম্মাজী মনিটরে চোখ লাগিয়ে দেখছেন। তিন নম্বরের ভ্যাজাইনা বেরিয়ে এসে ঝুলছে। খাটে ভর দিয়ে পাছা উচু করে রয়েছে। ব্রহ্মানন্দ নিজের লিঙ্গটা নাড়িয়ে মহিলার মুখের কাছে ধরতে ঘুরে বসে চুষতে শুরু করল। ব্রহ্মানন্দ মহিলার চুলের মুঠি চেপে ধরে নিজের দিকে চাপ দিচ্ছে।
ডান হাত দিয়ে গালে ঠাষ ঠাষ করে চাপড় দিচ্ছে। আম্মাজী পাঁচের দিকে দেখলেন সিদ্ধানন্দ মেয়েটার পা তুলে ধরেছে মেয়েটি কেদরে গেছে। সিদ্ধানন্দ ওই অবস্থায় ঢূকিয়ে ঠাপাতে শুরু করেছে। আম্মাজী চমকে ওঠেন,কারা ঢুকল ঘরে?এরা তো সোসাইটির কেউ বলে মনে হচ্ছেনা। সোসাইটিতে পুলিশ ঢুকেছে ছড়িয়ে পড়ে খবর। শুরু হয়ে যায় তৎপরতা। আম্মাজী মুহূর্তে কোথায় অদৃশ্য হলেন,কারো জানার উপায় নেই। কয়েকজন ধরা পড়ে হাতেনাতে। প্রতিটি ঘর হন্যে হয়ে খুজলেও আম্মাজীকে পাওয়া যায়না।
জানকির এই একটিমাত্র সন্তান,ভরত মিস্ত্রী মেয়ের বিয়ে দিয়ে গেছেন। কত বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে হয়েছে?সুভদ্রাকে দেখেনি রত্নাকর। জানতে ইচ্ছে হয় যখন বিয়ে হয় তার মনে কি বিয়ের বাসনা জেগেছিল নাকি বাপ-মায়ের বাধ্য সন্তান হিসেবে তাদের ইচ্ছে মেনে নিয়ে সম্মত হয়েছে? একটা মেয়ের মনে বিয়ের ইচ্ছে জন্মে কত বছর বয়সে? খুশীদিকে দেখে তো মনে হয়না তার মধ্যে বিয়ের জন্য ব্যাকুলতা আছে। সারাক্ষণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চিন্তা। সামাজিক অবস্থান ভেদে বিয়ের ইচ্ছের বয়সের তারতম্য হয় কি?রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,মাসী তোমার মেয়ের বয়স কত হবে?
–এককুড়ি পার হয়ে গেছে কবে।
–এত অল্প বয়সে–।
রত্নাকরের উদবেগ দেখে খিলখিল করে হেসে উঠল মাসী। হাসি থামিয়ে বলল,আপনে বুঝবেন না। বাচ্চা বিয়োনেতে যে কি সুখ মেয়ে হলে বুঝতেন।
নতুন কথা শেখা হল। সন্তান জন্ম দিয়ে মেয়েরা সুখ পায়। মনে হয় ম্যাডম এল। জানকি চলে গেল।
খুশবন্ত ঢুকল বেশ খুশি খুশি ভাব। হাতে একটা বই। ঘরে ঢুকে হাতের বইটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে চেঞ্জ করল। জানকি এক গেলাস সরবৎ নিয়ে উপস্থিত। খুশবন্ত হাত বাড়িয়ে গেলাসটা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,সাহেব কি করছে?
–লিখতেছে। জানকি বানিয়ে বলল।
–ওকে পাঠিয়ে দাও।
খুশবন্ত লুঙ্গি তুলে তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছল। রত্নাকর দরজায় দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে,খুশীদি ডাকছো?খাটের উপর সন্দীপন পত্রিকাটা পড়ে থাকতে দেখে বলল,ছেপেছে?
–ছাপবেনা মানে?ছাপা হয়েছে ছাপ্পা মারা হয়েছে। খুশবন্তের গলায় আত্মবিশ্বাস।
রত্নাকর বুঝতে পারেনা খুশীদির কথা। মোবাইল বাজতে টেবিল থেকে ফোন তুলে কানে লাগায়। খুশবন্তের চোখে মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে….এর মধ্যে আদালতে জামীন হয়ে গেল? …..ঠিক আছে ঠিক আছে সিসিটিভির ফুটেজ আছে অসুবিধে হবেনা. ..না না আপনি কি করবেন…রাখছি?
খুসীদির মুখ থমথমে রত্নাকর জিজ্ঞেস করল,কি হয়েছে?
খুশীদি মুখে হাসি টেনে যা বলল,আজ দুপুরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সোসাইটী থেকে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। আম্মাজীকে খুজে পায়নি। একটু আগে সবাই জামীনে মুক্ত হয়ে গেল।
রত্নাকর শুনে কোন কথা বলল না। খুশীদি বলল,তোর মন খারাপ মনে হচ্ছে।
–আমার মন খারাপ হবার কি আছে?তুমি যা ভাল বুঝেছো করেছো।
রতির কথায় খুশবন্ত বিরক্ত হয়। গলা চড়িয়ে বলল,জানকিমৌসী খানা লাগাও।
হাসিখুশি খুশীদিকে গম্ভীর দেখতে ভাল লাগেনা। রত্নাকরের খারাপ লাগে। খুশীদি যা করেছে জীবনেও সে ঋণ শোধ করতে পারবেনা। খেতে বসে জিজ্ঞেস করল,খুশীদি তুমি আমার উপর রাগ করেছো?
–তুই কে?তোর উপর আমি কেন রাগ করব?
–কেউ না?তাহলে তুমি আমার জন্য এত করছো কেন?
–বাজে কথা থাক। খাওয়া হলে লেখাটা পড়। কোনো বদল করতে হলে করবি। বাদলবাবু বলল,ঘোষ এ্যাণ্ড বোস পাব্লিশার্স লেখাটা বই হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। ওরা আসবে টাকা পয়সার কথা যা বলার বলে ঠিক করে নিবি।
–আমি কি বলব,তুমি যা বলার বলবে।
–তোর ব্যাপার তুই যা ভাল বুঝবি বলবি।
রত্নাকর মনে মনে হাসে,খুশিদি তার কথা তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এখন না মেজাজ শান্ত হোক পরে কথা বলা যাবে। খুশবন্ত খেয়ে উঠে পড়ল। ঘরে এসে ভাবছে ঘোষবাবুর কাছে সিসি টিভির ফুটেজ রয়েছে নষ্ট করে ফেললে তার হাতে কিছু থাকবেনা। আম্মাজী বেশ প্রভাবশালী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তার কাছে খবর ছিল আম্মাজী সোসাইটিতে আছে কিন্তু কোথায় গা-ঢাকা দিল?তন্ন তন্ন খুজেও পাওয়া গেলনা। কোনো চোর কুঠরি আছে হয়তো। হতে পারে মহিলা হয়তো মুখোস পিছনে আছে অন্য কেউ– আসল মুখ।
–খুশীদি আসব?খুশবন্ত তাকিয়ে দেখল দরজায় রতি দাঁড়িয়ে।
রত্নাকর ঘরে ঢুকে বলল,একটু বসবো?
–তোকে বললাম না,অদল বদল কিছু করার থাকলে কর। কয়েকদিনের মধ্যেই ওরা আসবে।
–আমি একটা অন্য কথা বলতে এসেছি।
খুশবন্ত লুঙ্গি হাটূ পর্যন্ত তুলে খাটে আসন করে বসে বলল,বল কি বলবি?
গদার মত খুশীদির পা গুলো। রত্নাকর খাটে মুখোমুখি বসে শুরু করল,আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত যা ঘটছে সবই হয়তো আমাদের মনোপুত নয়। না ঘটলেই বুঝি ভাল হতো।
–তুই কি আজকের ব্যাপারে বলছিস?
–বিশ্বাস করো খুশীদি তোমার পরাজয় দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়।
–জয়-পরাজয়ের কথা আসছে কেন?
–সোসাইটিতে কি হয় তুমি কি ভাবছো কেউ জানেনা?
–আমি মনে করি সোসাইটি একটা প্রস্টিট্যুট।
–আমি কি অন্যকথা বলেছি?
–তোর খুব দরদ দেখছি। রেইড করেছি সামাজিক স্বার্থে।
–তাতে বন্ধ হয়ে যাবে তুমি মনে করো?
–বন্ধ হল কি থাকল তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই,অন্যায় বুঝেছি করেছি।
–তোমার স্বার্থ আছে।
–কি বললি?আমার স্বার্থ আছে?সেদিন তোকে রাগাবার জন্য বলেছিলাম,আমি সোসাইটিতে যাবো–।
–আজ তুমিই রেগে যাচ্ছো।
–রতি এবার কিন্তু ঠাষ করে একটা চড় মারব।
রত্নাকর হেসে বলল,তা তুমি পারো। আমাকে শেষ করতে দাও। সোসাইটির শেকড় অনেক গভীরে তা তুমি আমার থেকে ভাল জানো। দুই-একজনকে গ্রেপ্তার করে কিছুই করতে পারবে না তাও তুমি জানো না তা নয়। তাহলে তুমি কেন করছো?নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অদম্য আকাঙ্খ্যা তোমার মনে। কড়া অফিসার সৎ অফিসার শুনতে তোমার ভাল লাগে। গীতায় আছে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন,দূরেণ হ্যবরং কর্ম বুদ্ধিযোগাদ ধন্নজয় । বুদ্ধৌ শরণমন্বিচ্ছ কৃপণাঃ ফলহেতবঃ। ।
–মতলব?
–কাম্য কর্ম নিষ্কাম কর্ম অপেক্ষা নিতান্ত নিকৃষ্ট। অতএব কামনাশূণ্য হয়ে সমত্ব বুদ্ধির আশ্রয় গ্রহণ কর। ফলাকাঙ্খী হয়ে যারা কাজ করে তারা অতি হীন।
খুশবন্ত মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে রত্নাকরের দিকে। এক সময়ে হেসে ফেলে বলল,রতি কি বই বললি, বইটা আমাকে দিস তো–পড়বো।
–খুশীদি এইজন্য তোমাকে আমার খুব ভাল লাগে। জানার ইচ্ছে জীবনের লক্ষণ। যে মুহূর্তে এই ইচ্ছে লুপ্ত হয় মানুষ তখন বেচে থেকেও মৃত।
খুশবন্তের মনের সমস্ত গ্লানি যেন স্বেদবিন্দুর মত শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে থাকে। রত্নাকর খাট থেকে ম্যাগাজিনটা তুলে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল।
খুশবন্ত অন্য মনস্কভাবে চিন্তা করে। ভাল কাজ করার অন্তরালে কি রয়েছে তার আত্মপ্রতিষ্ঠার উদগ্র আকাঙ্খ্যা?আপন মনে হাসল। যেখানে মেয়েদেরই প্রশ্রয় আছে সেখানে বেশ্যাবৃত্তি দূর করে সাধ্য কার। রতিকে যারা ফোন করছে তাদের সঙ্গে বেশ্যাদের ফ্যারাক কতটুকু? সব অবস্থাপন্ন ঘরের মেয়ে বউ সব,কেউ তো তাদের বাধ্য করেনি। কল খুলে রেখে জল সেচে কি লাভ?আগে বন্ধ করতে হবে কল। ধরা পড়ার পরমুহূর্তে কিভাবে জামীন পেয়ে গেল?
এই গল্পের পরবর্তী পর্ব আসছে…
গল্পটি কেমন লাগলো এবং পরবর্তীতে কোন ক্যাটাগরির গল্প চান? কমেন্ট করে জানান। ধন্যবাদ!